জেনে নিন গরু সম্পর্কে অজানা সব তথ্য।


ভারতীয় উপমহাদেশ   বিশ্বে গরুর পালনের ইতিহাস:


                         গরু গৃহপালিত "রোমন্থকপ্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত প্রাণী। এরা বোভিডি পরিবারের বোভিনিউ পরিবারের  অন্তর্গত প্রাণীযারা বস গণের বহুবিস্তৃত প্রজাতি। ১০,৫০০ বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কে ৮০টি বিভিন্ন বংশের গৃহপালিত পূর্বপুরুষ হিসেবে, তুরস্কে থেকে গরু পরর্বীতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে ২০০৩ মোতাবেক, আফ্রিকায় প্রায় ২৩১ মিলিয়ন গরু রয়েছে, যেগুলো ঐতিহ্যগত এবং অ-ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে বেড়ে উঠছে, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারার একটি "অবিচ্ছেদ্য" অংশ । 

                   ২০১১সালের অনুমান অনুযায়ী সারা বিশ্বে প্রায়  ১৩০  কোটি গরু রয়েছে।
 বর্তমানে ভারত গরু উৎপাদনে শীর্ষ একটি দেশে ।হিন্দু প্রধান দেশ ভারতের  কিছু অঞ্চলে ধর্মীয় কারণে গরুকে গুরুত্ব  মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। 
 দুধ  দুগ্ধজাত খাবারমাংস  চামড়ার জন্যএবং কৃষিকাজ  গাড়ি টানার কাজে গরু ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে চামড়া এবং সার বা  জ্বালানীর  জন্য গোবর অন্তর্ভুক্ত। সুস্বাদু খাবারের একটি বিরাট অংশ জুড়ে গরুর মাংস ব্যবহার হয়ে থাকে

                          অনেকে  গরুকে ধনসম্পদের প্রাচীনতম গঠন বিবেচনা করেন। অতি প্রাচীন কালে মানুষ যখন সভ্যতার ছোয়া পায়নি তখন গরু ছিল অতি প্রয়োজনীয় প্রাণী। বর্তমান সময়েও গরু একটি অপরিহার্য প্রাণী হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।বর্তমানে এশিয়ার অনেক দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।গিনেজ ওয়ার্ড বুকেও গরু জায়গা করে নিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু (গাভী) হলো মানিক্যম (Manikyam) । ১০ মাস বয়স থেকেই তার অস্বাভাবিক কম উচ্চতা লক্ষ্য করা যায়। এরপর মানিক্যম এর বয়স যখন ২ বছর তখন থেকে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড টিম গরুটিকে নজরে রাখে। এরপর তার বয়স যখন ৪ বছর তখন তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু (গাভী) হিসেবে ঘোষিত করা হয়। এই গরুর মালিক হলেন আস্কায় এন.ভি.। তিনি বাস করেন ভারতের কেরালাতে। অবিশ্বাস্য রকমের ছোট এই গরু। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, আস্কায়ের গরুটি উচ্চতায় মাত্র ৬১.১ সে.মি. বা ২৪.০৭ ইঞ্চি! তার এই উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ২০১৪ সালের ২১শে জুন।



ভারতীয় উপমহাদেশে গরু পালনের ইতিহাস :


গবাদি পশু (Cattle)  Bovidae গোত্রের Bos গণভুক্ত জোড়-আঙ্গুল ও খুরযুক্ত স্তন্যপায়ী। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২০০০ বছর আগে নব্যপ্রস্তরযুগে গবাদি পশুর গৃহপালন ও বিশ্বব্যাপী সেগুলির বংশবিস্তার শুরু হয়। Bos indicus Bos taurus দুটি ভিন্ন প্রজাতির গরু। ভারত উপমহাদেশে Bos indicus বা ভারতীয় জেবু (কুঁজযুক্ত) গরুর বাসস্থান। এদের শারীরিক বৃদ্ধিহার কম, আকার অপেক্ষাকৃত ছোট; বিলম্বিত যৌনতা প্রাপ্তি, কম উৎপাদনশীলতা এবং পরজীবীর সহজ শিকার এদের বৈশিষ্ট্য। পক্ষান্তরে, Bos taurus মাঝারি থেকে বড়, যথাসময়ে যৌনতা অর্জন, এবং মাংস ও দুধের ব্যাপারে অত্যধিক উৎপাদনশীল। গরুর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার  লাঙল ও গাড়িটানা, দুধ ও মাংস উৎপাদন। বাংলাদেশে সর্বমোট প্রায় ২৩৪ লক্ষ গরুর মধ্যে বলদ ও গাভী যথাক্রমে ১১৯.১ ও ১১৪.৯ লক্ষ। এর মধ্যে দুধেল গাভী ৩৫.৩ লক্ষ, দুগ্ধহীন গাভী ২৬.১ লক্ষ, ভারবাহী ২১.৩ লক্ষ ও উন্নতমানের গরু ৪২ লক্ষ।

বাংলাদেশে গরুর ইতিহাস:


ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে অনেকেই উন্নতজাতের স্থানীয় জাতের সঙ্গে উন্নতজাত ও সংকর গরু পুষে আসছে। স্থানীয় জাতের গরুর তুলনায় বিশুদ্ধ ও সংকর গরুর পুষ্টিচাহিদা বেশি, অভিযোজনক্ষমতা কম এবং অধিকতর পরজীবী ও রোগপ্রবণ। তবে, স্থানীয় জাত কম রোগপ্রবণ ও অধিক তাপসহিষ্ণু। বাংলাদেশে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জ জেলার কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্থানীয় জাতের উত্তম মানের গরু পাওয়া যায়। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মাঝারি আকারের গরুগুলিকে পাবনা জাতের গরু বলা হয়। এ গরু দিনে ৩-৫ লিটার দুধ দিতে পারে। চট্টগ্রামে কিছু বিশিষ্ট ধরনের লাল জাতের গরু দেখা যায়। চট্টগ্রাম জাতের গরু নামে পরিচিত এগুলি প্রতিদিন প্রায় ২ লিটার দুধ দেয়। মুন্সিগঞ্জ এলাকায় ‘সাদা মুন্সিগঞ্জ’ নামে পরিচিত বিশেষ গড়নের এক জাতের গরুর লক্ষণীয় উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রজনন বৈশিষ্ট্য আছে।   বাংলাদেশে গরুর কোনো নির্দিষ্ট জাত আজও উৎপন্ন হয় নি। কিন্তু দীর্ঘদিনের প্রাকৃতিক নির্বাচনে উদ্ভূত দেশে কতিপয় উন্নত দেশি জাতের গরু আছে। উন্নত জাতের দুধেল গরু উদ্ভবের তাগিদে এটি সম্ভব হয়েছে। এসব জাতের গরুর মধ্যে রয়েছে পাবনা, চট্টগ্রামের লাল, মুন্সিগঞ্জের সাদা এবং উত্তরবঙ্গের ধূসর জাতের গরু। বাংলাদেশে সচরাচর দৃষ্ট স্থানীয় গরুর গড়পড়তা সার্বিক উৎপাদনের তুলনায় এসব জাতের গরুর উৎপাদন ক্ষমতা বেশি।


বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৩৪ লক্ষ গরুর মধ্যে অধিকাংশই নানা ধরনের কাজে ব্যবহূত শ্রেণিহীন দেশিয় জেবু (কুঁজযুক্ত) গরু। সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত ছোট আকার, কম বৃদ্ধিহার, বিলম্বিত যৌনতাপ্রাপ্তি ও অল্প  দুধ উৎপাদন (গাভী প্রতি গড়ে মোট ২০৬ কেজি), এ গরুর বৈশিষ্ট্য। গরু সারা দেশে প্রায় সমভাবে ছড়ানো, তবে উত্তরাঞ্চলে গরুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
স্থানীয় গরুর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতীতে কয়েকবারই বিভিন্ন জাতের বিদেশি গরুর সঙ্গে এদের সংকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এজন্য হোলস্টাইন-ফ্রিসিয়ান, জার্সি, শাহিয়াল, হরিয়ানা, সিন্ধি, অস্ট্রেলীয়, শাহিয়াল-ফ্রিসিয়ান ইত্যাদি জাত আমদানি করা হয়েছিল। বর্তমানে কেবল বাংলাদেশের কয়েকটি সরকারি গরুর খামারে, বাণিজ্যিক গরুর খামারে, দুগ্ধ সংগ্রহ এলাকা এবং শহর ও উপশহর এলাকায় কিছুসংখ্যক বিশুদ্ধ, সংকর অথবা উন্নত জাতের গরু দেখা যায়।

গরু সম্পর্কে বেশি জানতে প্রবেশ করুন…https://petsanimalbazzar.blogspot.com/






No comments

Powered by Blogger.